নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজধানীর লালবাগের আমলিগোলা পার্ক অ্যান্ড কমিউনিটি সেন্টারে ব্র্যাকের কিয়স্ক বুথে ১৫ জুন নমুনা জমা দিয়েছিলেন করোনা আক্রান্ত সরকারি কর্মকর্তা মনি শংকর রায়। সোমবার এক সপ্তাহ পার হলেও ফলাফল জানতে পারেননি তিনি। এরই মধ্যে করোনা পজিটিভ হওয়ার ১৪ দিন পার হয়ে গেলেও শুধু দ্বিতীয় পরীক্ষার ফলাফল জানতে না পারার কারণে এখনও একলা ঘরে বন্দি জীবন কাটাচ্ছেন তিনি। একই অবস্থা বেসরকারি চাকরিজীবী জুবায়ের আল মেহেদিরও।
১ জুন প্রথম নিজের এবং স্ত্রীর করোনা পজিটিভ হওয়ার কথা জানতে পেরে বাড়িতেই আইসোলেশনে আছেন। ১৪ দিনের কোয়ারেন্টাইন শেষে পুনরায় নমুনা জমা দেওয়ার পাঁচ দিন পেরিয়ে গেলেও এখনও ফলাফল না পাওয়ায় স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারছেন না তারা। শুধু মনি শংকর বা জুবায়ের নন করোনায় আক্রান্ত অনেকেই পুনরায় টেস্টের ফলাফল দেরিতে পাওয়ায় দুর্বিসহ জীবন কাটাচ্ছেন।
ভুক্তভোগীরা বলছেন, বিভিন্ন ঝামেলার পর নমুনা দিতে পারলেও ফল পেতে অপেক্ষা করতে হচ্ছে ৩-৭ দিন। তার চেয়েও ভয়াবহ হলো, ফলাফল নেগেটিভ আসলে তা নাকি জানানোই হচ্ছে না। পিসিআর ল্যাবের সঙ্কটের কারণে এমনটা হচ্ছে সংশ্লিষ্টরা দাবি করলেও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দ্রুত রিপোর্ট না দিলে সংক্রমণের ঝুঁকি কয়েকগুণ বেড়ে যায়। ভুক্তভোগীরা বলছেন, ফলাফল না পাওয়ায় তারা অন্য রোগেরও চিকিৎসা করাতে পারছেন না তারা।
অভিযোগ আছে, আইইডিসিআর থেকে বলা হচ্ছে ফল নেগেটিভ আসলে তা নাও জানানো হতে পারে। আবার যারা দেরি করে জানছেন, করোনা পজিটিভ, তাদের মাধ্যমে করোনা আরও ছড়িয়ে পড়ার শঙ্কা বাড়ছে। দীর্ঘসূত্রতার জন্য স্বাস্থ্য অধিদফতর দায়ী করছে জনবল সঙ্কটকে। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ২৪ থেকে সর্বোচ্চ ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ফলাফল না দিতে পারলে ভয়াবহ বিপর্যয় নেমে আসতে পারে।
এ ব্যাপারে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. এবিএম আব্দুল্লাহ বলেন, টেস্টের ফলাফল যদি ৩-৪ দিন সময় লেগে যায় তাহলে সেটি চিকিৎসা ও আইসোলেশনেরও কাজে লাগছে না। শুধু স্বাস্থ্য বিভাগের কতজনের টেস্ট করা হয়েছে সেটি রেকর্ড হচ্ছে। আর ২৪ থেকে সর্বোচ্চ ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ফলাফল না দিতে পারলে ভয়াবহ বিপর্যয় নেমে আসতে পারে। পিসিআর ল্যাবের পরিবর্তে দ্রুত শনাক্তকরণ পদ্ধতির (র্যাপিড টেস্ট) করা যায় কি না তার ব্যবস্থা করতে হবে। উন্নত দেশগুলোতে এই পদ্ধতিতে পরীক্ষা করা হয়। যদি এভাবে দ্রুত গতিতে পরীক্ষা হয় তাহলেই যেমন রোগীর আইসোলেশন নিশ্চিত হবে তেমনি সংক্রমণের ভয়াবহতার হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের নিয়ন্ত্রণ কক্ষের উপপরিচালক ডা. আয়শা সিদ্দিকা বলেন, বিভিন্ন জায়গা থেকে টেস্টের নমুনা আনতে হচ্ছে। যার জন্য ২৪ থেকে সর্বোচ্চ ৪৮ ঘণ্টা সময় লাগছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, করোনা টেস্টের ফলাফল পাওয়ার এ দীর্ঘসূত্রতা একদিকে যেমন রোগীর মৃত্যুর ঝুঁকি বাড়াচ্ছে, অন্যদিকে এর চেয়েও ভয়াবহতা হলো এর মাধ্যমে অতি দ্রুত দেশব্যাপী করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়াচ্ছে।